রবিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৫, ০২:৫২ পূর্বাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

ইসালে সওয়াবে কয়েকটি আমল

মাওলানা মুহাম্মাদ আবদুর রহমান:
ইসলামের পরিভাষায় ইসালে সওয়াব হলো- কোনো নেক আমল করে এর সওয়াব মৃত ব্যক্তিকে দান করা। যেকোনো নেক কাজের ইসালে সওয়াব করা জায়েজ। তবে সব পদ্ধতির গুরুত্ব ও মর্যাদা এক পর্যায়ের নয়। এখানে কয়েকটি পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-

হজ

হজ ইসলামের এক প্রোজ্জ্বল নিদর্শন এবং অত্যন্ত গভীর ও হৃদয়গ্রাহী ইবাদত। এর মধ্য দিয়ে বান্দা আর প্রতিপালকের মধ্যে যে নিবিড় সম্পর্কের চর্চা হয় তা অতুলনীয়। সেইসঙ্গে এটা বিরাট পুণ্যময় আমলও বটে। এক হাদিসে আছে, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হলো, সর্বোত্তম আমল কী? তিনি বললেন, আল্লাহ ও তার রাসুলের প্রতি ইমান আনা। জিজ্ঞেস করা হলো, তারপর কী? বললেন, আল্লাহর পথে জিহাদ করা। জিজ্ঞেস করা হলো, তারপর কী? বললেন, মাবরুর হজ। -সহিহ বোখারি : ১৫১৯

অন্য এক হাদিসে আছে, যে আল্লাহর জন্য হজ করে এবং তাতে অশালীনতা ও গোনাহ থেকে বিরত থাকে, সে হজ থেকে নবজাতক শিশুর মতো (নিষ্পাপ হয়ে) ফিরে আসে। -সহিহ বোখারি : ১৫২১

হজের ইসালে সওয়াব করা জায়েজ। এটা একাধিক হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। এ প্রসঙ্গে বর্ণিত কয়েকটি হাদিস হলো-

হজরত বুরায়দা (রা.) থেকে বর্ণিত, আমি রাসুল (সা.)-এর কাছে উপস্থিত ছিলাম। এক মহিলা এসে জিজ্ঞেস করল, …আমার মা হজ না করে ইন্তেকাল করেছেন। আমি কি তার পক্ষ থেকে হজ করতে পারব? তিনি বললেন, (হ্যাঁ), তুমি তার পক্ষ থেকে হজ করো। -সহিহ মুসলিম : ১১৪৯

হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, জুহায়না গোত্রের এক মহিলা এসে নবী কারিম (সা.)-কে জিজ্ঞেস করল, আমার মা হজের মানত করেছিলেন কিন্তু তা পূরণ করার আগেই মৃত্যুবরণ করেছেন। আমি কি তার পক্ষ থেকে হজ করতে পারব? তিনি বললেন, হ্যাঁ, তার পক্ষ থেকে হজ করো। আচ্ছা তোমার মার ওপর ঋণ থাকলে কি তুমি তা পরিশোধ করতে না? আল্লাহর ঋণ পরিশোধ করো। তার ঋণই অধিকতর পরিশোধযোগ্য। -সহিহ বোখারি : ১৮৫২

বর্ণিত হাদিসগুলো থেকে বোঝা যায়, হজ মাইয়্যিতের উপকারে আসবে এবং এর সওয়াব তার কাছে পৌঁছবে। এখানে মাইয়্যিতের জন্য হজ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। ইমাম নববি (রহ.) লেখেন, দোয়া, সদকা ও হজের সওয়াব সর্বসম্মতিক্রমে মাইয়্যিতের কাছে পৌঁছে। -শরহু সহিহ মুসলিম : ১/৯০

ওমরাহ

ওমরাহ খুবই সওয়াবের কাজ। এক হাদিসে আছে, তোমরা হজ ও ওমরাহ পরপর একত্রে আদায় করো। এ দুটো দারিদ্র্য ও গোনাহকে এমনভাবে দূর করে দেয় যেমন হাপর লোহা ও সোনা-রুপার ময়লা দূর করে দেয়। -জামে তিরমিজি : ৮১০

অন্য এক হাদিসে আছে, এক ওমরাহ থেকে আরেক ওমরাহ মধ্যবর্তী সময়ের জন্য কাফফারা। -সহিহ মুসলিম : ১৩৪৯

ওমরাহ করেও ইসালে সওয়াব করা জায়েজ। হজরত আবু রাযিন উকায়লি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি নবী করিম (সা.)-এর কাছে এসে বললেন, আল্লাহর রাসুল! আমার পিতা খুবই বৃদ্ধ। তিনি হজ, ওমরাহ এমনকি সফর করতেও সক্ষম নন। নবীজী (সা.) বললেন, তুমি তার পক্ষ থেকে হজ ও ওমরাহ করো। -জামে তিরমিজি : ৯৩০

এ হাদিস থেকে স্পষ্ট যে, মাজুরের পক্ষ থেকে নায়েব হিসেবে ওমরাহ করা জায়েজ। সুতরাং নিজে ওমরাহ করে মাইয়্যিতকে সওয়াব পৌঁছানোও জায়েজ। শায়েখ মুহাম্মদ ইবনে সালেহ আলউসায়মিন (রহ.) বলেন, মৃতের পক্ষ থেকে হজের মতো ওমরাহ করাও জায়েজ। -ফাতাওয়া আরকানুল ইসলাম : ৫০৬

শায়েখ আবদুল্লাহ ইবনে জিবরিন (রহ.) বলেন, যেকোনো নেক আমল মাইয়্যিতকে হাদিয়া দেওয়া জায়েজ এবং এ তার উপকারে আসবে। যেমন হজ, ওমরাহ, সদকা, দোয়া ও জেহাদ ইত্যাদি। -আদদুরারুল মুবতাকারাত ফি শরহি আখসারিল মুখতাসারাত : ১/৪৫৪-৪৫৫

রোজা

রোজা এক মহিমান্বিত ইবাদত, তাকওয়া অর্জনের অনন্য উপায় এবং প্রভূত সওয়াব ও পুণ্যময় কাজ। এক হাদিসে আছে, মানুষের প্রত্যেক আমলের প্রতিদান বৃদ্ধি করা হয়- একটি আমলের সওয়াব দশ থেকে সাতশ গুণ পর্যন্ত। মহান আল্লাহ বলেছেন, রোজা ছাড়া। কারণ এ একমাত্র আমার জন্য এবং আমি নিজেই এর প্রতিদান দেব। বান্দা একমাত্র আমার জন্য সহবাস ও পানাহার থেকে বিরত থাকে। -সহিহ মুসলিম : ১১৫১

রোজার সওয়াব রেসানি করা বৈধ। এ প্রসঙ্গে হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি নবী কারিম (সা.)-এর কাছে এসে জিজ্ঞেস করল, আমার মা মারা গেছেন কিন্তু তার জিম্মায় এক মাসের রোজা ছিল। আমি কি তার পক্ষ থেকে কাজা করতে পারব? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আল্লাহর ঋণই অধিকতর পরিশোধযোগ্য। -সহিহ বোখারি : ১৯৫৩

হজরত বুরায়দা (রা.) থেকে বর্ণিত, আমি হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে উপস্থিত ছিলাম, এক মহিলা এসে বলল, …আমার মা ইন্তেকাল করেছেন। তার জিম্মায় এক মাসের রোজা ছিল। আমি কি তার পক্ষ থেকে রোজা রাখতে পারব? তিনি বললেন, (হ্যাঁ), তুমি তার পক্ষ থেকে রোজা রাখো। -সহিহ মুসলিম : ১১৪৯

নামাজ

নামাজ অতি মহিমাময় এক ইবাদত, আল্লাহর কাছে সমর্পণের অতুল্য পন্থা এবং অত্যন্ত ফজিলত ও সওয়াবের বিষয়। নামাজ পড়ে মৃত ব্যক্তিকে সওয়াব পৌঁছানো জায়েজ। আমরা আগে দেখেছি যে, অর্থ ও দেহের সমন্বিত ইবাদত তো বটেই রোজার মতো নিখুঁত ইবাদতে বাদানিয়ারও (শারীরিক ইবাদত) ইসালে সওয়াব জায়েজ। এ থেকে বোঝা যায় যে, নামাজের ইসালে সওয়াব করাও জায়েজ। ইবনে কুদামা (রহ.) দোয়া, ইস্তেগফার, হজ ও রোজার ইসালে সওয়াব সংক্রান্ত কিছু হাদিস উল্লেখ করে বলেন, এগুলো সহিহ হাদিস এবং এ থেকে বোঝা যায় যে, সব নেক আমল মাইয়্যিতের উপকারে আসবে। কারণ রোজা, হজ, দোয়া ও ইস্তেগফার ইবাদতে বাদানিয়া হওয়া সত্ত্বেও আল্লাহ এর কল্যাণ মৃত ব্যক্তিকে পৌঁছান। সুতরাং অন্যান্য নেক আমলের হুকুমও একই হবে। -আলমুগনি : ৩/৫২১

শায়েখ উসায়মিন লিখেছেন, নামাজ পড়ে বা সদকা করে বা হজ করে অথবা কোরআন তেলাওয়াত করে কিংবা রোজা রেখে এর সওয়াব মৃত ব্যক্তিকে দান করতে কোনো অসুবিধা নেই। এরপর তিনি সদকা সংক্রান্ত দুটি হাদিস উল্লেখ করে বলেন, অন্যান্য ইবাদত সদকার মতোই, উভয়ের মধ্যে কোনো ফারাক নেই। আর নবী কারিম (সা.)-এর পক্ষ থেকে এগুলোর ইসালে সওয়াব অবৈধ হওয়ার সমর্থনে কোনো বক্তব্য নেই। এজন্য এ কথা বলা যাবে না যে, যে বিষয়গুলোর ইসালে সওয়াবের কথা হাদিসে স্পষ্ট বর্ণিত হয়েছে, সেগুলোতেই সীমাবদ্ধ থাকতে হবে। সুন্নাহতে যেহেতু সাধারণ ইবাদতের কথা এসেছে তাই যেগুলো সম্পর্কে তা নীরব, সেগুলোর হুকুমও বর্ণিত বিষয়গুলোর মতোই হবে। বিশেষত যখন এগুলো নবী কারিম (সা.) নিজ থেকে ইরশাদ করেননি। বরং তার কাছে নির্দিষ্ট কিছু ঘটনার সমাধান জানতে চাওয়া হলে তিনি সমাধান দিয়েছেন। আর নির্দিষ্ট কোনো বিষয়ের সমাধান থেকে এটা কিছুতেই প্রমাণিত হয় না যে, এ ছাড়া অন্যগুলো অবৈধ। -মাজমুউ ফাতাওয়া ওয়া রাসায়েলে ইবনে উসায়মিন : ১৭/২৫৮

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION